বয়স হয়ে গেছে ৭৫ বছর। বার্ধক্যের ভারে নুব্জ্য হয়ে পড়েছে শরীর। শক্তি-সামর্থ্যও কমে এসেছে। কিন্তু এতসব অক্ষমতা থাকলেও ছিল ইস্পাতের মতো দৃঢ় মনের জোর। আর তাই বয়োবৃদ্ধ এক নারী দৈনিক প্রায় ৭ ঘণ্টা ব্যয় করে নিজ হাতে সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ লিখে অনন্য কীর্তি স্থাপন করেছেন। ৭৫ বছর বয়স্ক এ বৃদ্ধার নাম সাইয়েদা সাদ আবদুল কাদের। মিশরীয় এ নারীর প্রচণ্ড ইচ্ছে ছিল কোরআন হেফজ করবেন। কিন্তু বয়সের আধিক্য ও স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ায় ফলে তার পক্ষে পূর্ণাঙ্গ কোরআন মুখস্ত করা সম্ভব ছিল না।






কিন্তু কিছু করতে হবে- এ ভেবে তিনি নাতির সঙ্গে পরামর্শ করলেন। এতে নাতি পরামর্শ দিলেন কোরআন লিখার। এরপর প্রবল আগ্রহ ও উৎসাহবোধে টানা ৪ বছর নিজ হাতে কোরআন লিখে গেলেন। আর শেষ পর্যন্ত তিনি তার উদ্দেশ্যে সফল হলেন এবং কোরআন লিখে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনারত অবস্থায় তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর নিজেদের মানুফা প্রদেশ থেকে আলেকজান্দ্রিয়ায় চলে আসেন। পারিবারিক ও সাংসারিক বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে তার কোরআন মুখস্ত করা হয়ে উঠেনি।
কিন্তু প্রতিনিয়ত তার মনে প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহবোধ কাজ করতো। তবে তিনি মনে করেন, তার প্রচণ্ড আগ্রহ থাকা স্বত্বেও কোরআন মুখস্ত করতে পারেনি। আর সেজন্যই হয়ত আল্লাহ তাকে এমন মহৎ কাজ করার তাওফিক দান করেছেন। সম্পূর্ণ কোরআন লিখতে তিনি ৪০টি কলম ব্যবহার করেন। শব্দগুলোতে হরকত দিয়েছেন কালো রং দিয়ে। তবে ‘আল্লাহ’ শব্দ ও আয়াতের সংখ্যা লেখায় লাল রং এবং অন্যান্য শব্দ লেখায় নীল রংয়ের কালি ব্যবহার করেন। তিনি আশা করছেন, তার সন্তানরা কোরআনের পাণ্ডুলিপিটি শিগগির প্রিন্ট আকারে প্রকাশ করবে।






আরো পড়ুন: জীবনে সুখী হওয়ার পাঁচ পরামর্শ: মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ারা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।’ مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ (সূরা: নাহল, আয়াত: ৯৭) জীবনের পথচলায় কখনো কখনো এমন কিছু দুঃখবোধ সামনে চলে আসে, এমন কিছু হতাশার মুহুর্ত আসে, যা একজন মানুষের স্বচ্ছ মনটাকে বিষিয়ে তোলে। অবসাদে ভরে যায় স্রষ্টা প্রদত্ত এই টুকরো জীবন!






কষ্টবোধের করাল গ্রাসে নিপতিত হয় মুসলিম অমুসলিম সবাই! অথচ প্রতিটি মানুষের, বিশেষত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দুনিয়ার সময়গুলো খুব দামী। কোনো বিষয় আসলে আমাদের অসুখী করতে পারে না, অশান্তির দাবানলে কত মূল্যবান সময় হারিয়ে যায়, অথচ সুখী হওয়াটা সম্পূর্ণ নিজের হাতে! যে বিষয় বা মানুষটি আপনার সুখী হওয়ার পথে অন্তরায়, তার ভার আপনার প্রভুর হাতে ছেড়ে দিন।
পৃথিবীতে প্রতিটি জিনিসই ফিরে ফিরে আসে। যে আপনাকে কষ্ট দিয়েছে, ঠকিয়েছে প্রতিনিয়ত, ব্যথায় জর্জরিত করে আপনাকে সুখী হতে বাঁধা প্রদান করেছে, দেখবেন দুনিয়া ও আখিরাতে সে তার প্রতিদান পাবেই। তো! আপনি কেন শুধু শুধু পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে বা বৈশ্বিক ব্যর্থতায় সুখ বিকিয়ে দিচ্ছেন? মানুষ চাইলেই সুখ নামের পরশ পাথরটাকে নিজের করে নিতে পারে সহজেই। আসুন জেনে নেই সুখী জীবনের পথে পাঁচটি কার্যকরী টিপস!






(১) হতাশা নয়, কৃতজ্ঞ থাকুন, কৃতজ্ঞতার অভাববোধ থেকেই হতাশার জন্ম। জীবন, জগতের দুর্বিষহ কিছু সময় মাঝে মাঝে আমাদের হতাশার পথে ঠেলে দেয় এবং শয়তানও এক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে ভালোবাসে। পৃথিবীতে কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো অনেক কিছু আছে আসলে! এই যে এখনও আপনি নিঃশ্বাস নিচ্ছেন, এই লেখাটা পড়তে পারছেন, এর জন্য কতখানি কৃতজ্ঞ হয়েছেন? আপনার বিনামূল্যে প্রাপ্ত নিঃশ্বাসের মূল্য জানেন কী? যে নিউরণে আপনি মন খারাপের বসতি গড়ছেন, সে মস্তিষ্কের ক্ষমতা নিয়ে ভেবেছেন কখনো?
অনেক গবেষণা করেও মানুষের ব্রেইনের ক্ষমতা নির্ণয় করতে সক্ষম হয়নি বিজ্ঞানীরা। তবে বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিষ্কের মেমোরি ক্যাপাসিটির যে হিসাব দিয়েছেন তা জানলে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি সম্পর্কেও আপনার ধারণা বদলে যাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সারা জীবনেও আমাদের মস্তিষ্কের মেমোরি কার্ডটি পরিপূর্ণ করতে পারিনা আমরা। আমরা যদি ৩০ লক্ষ্য ঘণ্টা বা ৩৪২ বছর এক নাগাড়ে মস্তিষ্কের মেমোরি কার্ডে সারাক্ষণ ভিডিও ধারণ করি তবুও আমাদের মস্তিষ্ক নামের সুপার কম্পিউটারের মেমোরির স্পেস পূরণ হবে না।






আর অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মূল্য হিসেব নাই বা দিলাম। আসলে বুদ্ধিমানদের জন্য পুরো পৃথিবীতেই কৃতজ্ঞতার উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভালো কাজ করুন, কৃতজ্ঞতা আদায় করুন আর খুব ভালো থাকুন। সঙ্গে সঙ্গে আপনার রবের বাণীটি স্মরণ করুন- وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সূরা: ইব্রাহিম; ১৪, আয়াত: ৭)
এছাড়া — শাইখ হামজা ইউসুফের কথাটিও মনে রাখতে পারেন-: ভালো কাজের মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে। যখন সময় হয় কেবল তখনই তার বর্ষণ হয়। আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করেন শুকনো মৃত মাটির ওপরে; একদম সঠিক সময়েই। যখন পথ অবারিত হবার সময় হবে, তখনই সেই পথটি প্রশস্ত হবে। আল্লাহ তার সময় অনুযায়ীই সেই কাজটি করেন, আমাদের সময়ের হিসেবে নয়। আর এটা আমাদের ক্বাদরের ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকার একটি অংশ; যা হয়েছে তা আপনার জন্য নির্ধারিত ছিলো বলেই হয়েছে।’ (সংক্ষেপিত, ২০১১ রিহলা)






২) অলসতা নয় কাজ করুন: ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ প্রবাদটির গূঢ় মর্ম হলো- আপনি যদি কোনোভাবে আপনার ব্রেইনকে খানিক ফাঁকা রাখতে চান, তবে সেই ফাঁকা স্থান কখনো ফাঁকা থাকবে না, বরং সে জায়গা দখল করবে স্বয়ং শয়তান। সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকাতেই প্রশান্তি! এছাড়া আপনাকে আমাকে এমনি এমনি এই গ্রহে পাঠানো হয়নি। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে গভীরভাবে ভাবুন। নিজের অক্সিজেনের মূল্য পরিশোধ করতে হলেও কাজ করুন! পৃথিবীর কাছে ঋণী হওয়াতে কোনো কৃতিত্ব নেই! এছাড়া কর্ম মুখী জীবনের জন্য আপনার প্রভু আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ বলেন-: فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমআ, আয়াত: ১০) (৩) অপচয় নয় সাদাকাহ করুন: পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা আমাদের ভোগবাদীতা আর অপচয় করতে প্রলুব্ধ করে। সম্পদ আহরণের অসুস্থ প্রতি্যোগিতা মৃত্য পর্যন্ত আমাদের মাতিয়ে রাখে।






অথচ নশ্বর এ পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকে কর্মের মধ্যে, অর্থের দিক থেকে নয়। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এক যৌথ গবেষণায় প্রকাশিত হয়, যারা দান করেছেন, অন্যদের উপহার দেবার জন্যে ব্যয় করেছেন, তারা অনেক বেশি সুখী মনে করছেন নিজেকে! অন্যদিকে নিজের জন্য সঞ্চয়কারী মানুষগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুঃখবোধ আর অশান্তিসহ পৃথিবী ছেড়েছেন। গোপন দাতা হন, সুখী হতে চাইলে দান করুন প্রতিদিন। তাছাড়া দান মানে শুধু অর্থের কোরবানী নয়, বরং হাসিমুখে কথা বলাও সাদাকাহ! ইহকাল ও পরকাল দুটোই সুন্দর করতে চাইলে সাদাকাহ এর বিকল্প নেই!






হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহর ছায়া ব্যতিত কোনো ছায়া থাকবে না, তখন আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির লোককে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন। (তাদের মধ্যে একজন হলো) যে ব্যক্তি এতো গোপনে সাদকাহ বা দান করে যে, ডান হাত যা দান করে, বাম হাত তা টের পায় না।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)
(৪) রাগ নয় ক্ষমা করুন: জীবনে তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যাওয়াই কল্যাণ। পৃথিবীতে যা কিছু হয় বা আসে ভালোর জন্যই আসে। ভালো মানুষগুলো আমাদের জীবনে আসে কল্যাণ শেখাতে, আর খারাপ মানুষগুলো দিয়ে যায় অভিজ্ঞতা! বৈশ্বিক কোনো কিছুর জন্য রেগে যাওয়া বোকামী। ভেবে দেখুন, আমাদের নিজেদের প্রত্যেকটা অনুশোচনার জন্য নিজেরই বেখেয়ালী রাগটাই দায়ী। ক্ষমা মহৎ গুণ, সবাই ক্ষমা করতে পারেনা, তাই সুখীও হতে পারেনা! আসুন না! সুখী হওয়ার পথে হজরত আলী (রা.) এর মতো আমরাও শুধু আল্লাহর জন্যই ক্ষমা করে দেই।






(৫) নেতিবাচকতা নয় ইতিবাচক হোন: গ্লাস শূন্য-পূর্ণ নিয়ে অনেক গল্পই আমরা শুনেছি। তবে আমি মনে করি, যেহেতু পূর্ণ গ্লাস দেখলেই আপনার কল্যাণ, সে ক্ষেত্রে পূর্ণ গ্লাসই দেখুন না! মানুষের কদর্যতা নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে শুধু দুর্গন্ধই ছড়াবে, আর তার খানিক গন্ধ কিন্তু আপনার শরীরেও লেগে যেতে পারে। ভালো কিছুর চর্চা করুন, কল্যাণকামী হন। আপনি যখন কোনো নেতিবাচক বিষয় নিয়ে ভাবছেন, তখন আপনার নিউরণই কিন্তু সর্বপ্রথম অবচেতন ভাবে নেতিবাচকতাকেই গ্রহণ করছে। ইতিবাচক হন, কল্যাণে ভরে যাবে আপনার জীবন।
পবিত্র কোরআন মুমিনদেরকে ইতিবাচকতা ও প্রফুল্লতার দিকে আহ্বান জানিয়েছে। সূরা ইউনুসের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ ‘হে নবী! বলুন এ জিনিসটি যে, তিনি পাঠিয়েছেন এটি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তার মেহেরবানী। এ জন্য লোকেরা যেন আনন্দিত হয়, কেননা তারা যা কিছু জমা করছে সে সবের চেয়ে এটি অনেক ভালো।’ সুতরাং, সুযোগ পেলেই পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করুন, প্রাণ খুলে হাসুন, আর সৃষ্টির সেবায় নিমগ্ন হোন। সুখী হওয়ার পথে আপনাকে অভিনন্দন!