Homeবাংলাদেশবিআইজিডির জরিপ: ৮১% মানুষ চায় যতদিন প্রয়োজন এই সরকার থাকুক

বিআইজিডির জরিপ: ৮১% মানুষ চায় যতদিন প্রয়োজন এই সরকার থাকুক

দেশের ৮১ শতাংশ মানুষ চায় সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য যতদিন প্রয়োজন, ততদিন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকুক। আর ১৩ শতাংশ মানুষ মনে করে, অতিদ্রুত নির্বাচন দিয়ে এই সরকারের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত। বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

‘পালস সার্ভে ২০২৪: জনগণের মতামত অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই জরিপ করা হয় গত ২২ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান জরিপের ফল তুলে ধরেন। পরে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য মামুন আবদুল্লাহিল ও ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমীন এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৩৮ শতাংশ মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার তিন বছর বা তার বেশি সময় থাকা উচিত; ৯ শতাংশ মনে করে এই মেয়াদ হতে পারে দুই বছর; আর ৩৫ শতাংশ মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর থাকা উচিত। জরিপে অংশ নেওয়া ৭১ শতাংশ মানুষের ধারণা, দেশ সঠিক দিকে যাচ্ছে। অর্থনীতি সঠিক দিকে যাচ্ছে মনে করে ৬০ শতাংশ।জরিপের ফল অনুযায়ী, ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করে দেশের প্রধান সমস্যা অর্থনীতি (মুদ্রাস্ফীতি/ ব্যবসায়িক অস্থিতিশীলতা)। ১৫ শতাংশের মতে প্রধান সমস্যা বন্যা, ১৩ শতাংশের মতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ৭ শতাংশের মতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছে ৮৪ শতাংশ। আর ৮১ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকে সমর্থন করে। ৭২.২ শতাংশ মানুষ মনে করে, সাধারণ সময়ের তুলনায় আগস্টে অপরাধ বাড়েনি আর ২৫ শতাংশ মনে করে বেড়েছে।

জরিপে দেশের ৬৪ জেলার ৪ হাজার ৭৭৩ জনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৬৩ জনের ওপর জরিপ করা হয়, যা মোট নমুনার ৪৯ শতাংশ। এতে নারী-পুরুষের অনুপাত ৪৩: ৫৭। উত্তরদাতাদের ৬৭ শতাংশ গ্রামের এবং ৩৩ শতাংশ শহরের বাসিন্দা। বিআইজিডির আগের চারটি গবেষণা থেকে নমুনা নেওয়া হয়। সেগুলো হলো– এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআইজিডি সার্ভে ২০২৪, ইয়ুথ সার্ভে ২০২১, মাদ্রাসা সার্ভে ২০২০ এবং ছাত্র পোল ২০২৪।

অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন দলনিরপেক্ষ হতে হবে। কমিশনার নিয়োগ হবে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে। এই কমিটি হবে ইনক্লুসিভ।’ তিনি বলেন, ‘এর আগেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে সেটি রাজনৈতিক দলগুলো অনুসরণ করেনি। আমরা সংস্কার করছি; কিন্তু এটি যদি ফল না দেয়, তাহলে লাভ নেই। তাই কমিশন গঠনে অনেকের মতামত নেব।’বদিউল আলম বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন চাচ্ছি, তবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কারের পাশাপাশি যারা অন্যায় করেছে, নির্বাচনী অপরাধ করেছে, তাদেরও বিচার হতে হবে।’

সামিনা লুৎফা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বৈষম্য দূরীকরণ করে ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে ইনক্লুসিভ বলতে কাকে বুঝব, মাজার কী বাদ, শেখ হাসিনা চলে গেছে, বাকিরা তো আছে। তাদের ব্যাপারে কী ভাবনা সেটাও বলতে হবে।’

মামুন আবদুল্লাহিল বলেন, ‘জরিপ অনুযায়ী এই সরকারের প্রতি মানুষ আস্থাশীল। মানুষের আশা এবং হতাশা যে কোনো সময় আসতে পারে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারলে আস্থা আর থাকবে না।’ সংস্কার কমিশনগুলোতে ছাত্রদের প্রতিনিধি না রাখার সমালোচনা করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রশ্নে ভূঁইয়া আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গণহত্যার যে ঘটনাটি ঘটেছে, ফেয়ার ট্রায়ালের মাধ্যমে তার বিচার হতে হবে। তার পর তাদের সঙ্গে সংলাপ।’

সূত্র: সমকাল।

Must Read