সিরাজগঞ্জে অসময়ে বিদেশি তরমুজ চাষাবাদ করে প্রথম বছরেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে সিরাজগঞ্জের দুই কৃষক বন্ধু। এক বিঘা জমিতে তারা এ চাষাবাদে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন। সাফল্য পাওয়া দুই বন্ধু হচ্ছে সদর উপজেলার শালুয়াভিটা গ্রামের মো. সেলিম রেজা ও ইউসুফ আলী। তাদের এমন সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এখন তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
জানা যায়, দুই বন্ধু বগুড়ায় বেড়াতে গিয়ে এক কৃষকের জমিতে চাষাবাদ দেখে তরমুজ চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরবর্তীতে তারা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের গিয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানান। কৃষি বিভাগের পরার্মশ ও সার্বিক সহযোগিতায় ২৫ হাজার টাকায় নিজেদের গ্রামের মাঠে এক বিঘা জমি বাৎসরিক লিজ নেন।
সেখানে আধুনিক মালচিং মাচা পদ্ধতিতে এগ্রো-১ কোম্পানির স্মার্টবয়-২ জাতের তরমুজ চাষাবাদ করেন এই কৃষকরা। প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিপাতে তরমুজের গাছ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তারা। আবহাওয়া ভাল হলে তাদের জমিতে চারাগাছে ছেয়ে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে গাছ বড় হলে পুরো জমিতে মাচা দিয়ে দেন। এখন সেই মাচার নিচে সারি সারি ঝুলে আছে হাজার হাজার তরমুজ।
ভারী হওয়ায় এগুলো নেট দিয়ে মাচার সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তরমুজ তুলে বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন এই তরমুজ দেখতে স্থানীয় কৃষক সহ দূর দূরান্তের পাইকরা ছুটে আসছেন। তাদের পরার্মশ নিয়ে নিজেদের জমিতে এর চাষাবাদ করার কথা জানাচ্ছেন।
তরমুজ চাষি মো. সেলিম রেজা জানান, তিন হাজার তরমুজ নেট দিয়ে মাচায় বেঁধে দিয়েছেন। আরও প্রায় দেড় হাজার তরমুজ বড় হচ্ছে। এগুলোও বেঁধে দিবো। তাদের জমির প্রতিটি তরমুজ তিন থেকে চার কেজি ওজনের হবে। ইতোমধ্যে পাইকাররা পুরো জমির তরমুজের দাম ৩ লাখ টাকার ওপর বলেছেন। কিন্তু আমরা নিজেরাই জমি থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করবো। বর্তমানে বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে এই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে পুরো জমির তরমুজ ৬ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আরেক কৃষক ইউসুফ আলী জানান, এই চাষাষাবেদ তারা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি জৈব এবং কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেছেন। এখানে বাড়তি কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করেননি। এই পুরো চাষাবাদে তাদের প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদে এখান থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তারা। এর পাশাপাশি তারা আরও ৫ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন, আলু চাষাবাদ শুরু করেছেন।
স্বপ্ন দেখছেন এই চাষাবাদের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করার। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার সাদাত জানান, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই কৃষককে আমরা তরমুজ চাষাবাদে সহায়তা দিয়েছি। তাদের মালচিং পেপার, বীজ, সার, বালাইনাশকসহ প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাদের পাশে থেকে পুরো চাষাবাদে মাঠ পর্যায়ে সব রকমের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছি। প্রথম বছরেই তারা ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছে।