শীতের আমেজ আর নববর্ষের উল্লাসে মেতে উঠেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মানুষ। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনে শুরু হওয়া নবান্ন উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর এই অঞ্চলে বসে এক ঐতিহ্যবাহী মেলা, যা স্থানীয়দের দাবি, প্রায় ৩শ বছরের পুরোনো। আজ রোববার ভোর থেকেই উথুলী বাজারে গড়ে ওঠা মেলা প্রাঙ্গণটি ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে ওঠে। এলাকার মানুষ নানা ধরনের নতুন সবজি, মিষ্টান্ন এবং কসমেটিকের দোকান নিয়ে হাজির হলেও মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে উঠে আসে বিশাল আকারের নানা জাতের মাছ। মেলায় এক দিনে কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
স্থানীয়রা জানান, মেলাটি শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। তাদের বিশ্বাস, এই ঐতিহ্য গত তিন শতাব্দী ধরে সজীবভাবে বেঁচে রয়েছে এবং আগামীতেও তা সংরক্ষিত থাকবে। নবান্ন উৎসবের এই মেলা স্থানীয় কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের পরিচয়ও তুলে ধরে, যা অনেকের কাছে একটি ভিন্নধর্মী আকর্ষণ হয়ে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, অগ্রহায়ণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবার ঘরে নতুন ধান ওঠে। এ উপলক্ষে বসে নবান্নের মেলা। এ সময় বাড়ি বাড়ি মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়। উথুলী গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গরীবপুর, বেড়াবালা, বাঘমারা, গণেশপুর, চানপুর, খালিমপুর, মোকামতলাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোরন থেকেই মেলায় বড় মাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শতাধিক দোকানে বোয়াল, রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড কার্প, ব্লাড কার্পসহ নানা রকমের মাছ বিক্রি হচ্ছে। মেলায় রুই, কাতলা ও চিতল মাছ ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৩০০-৪৫০ টাকা দরে ব্রিগেড ও সিলভার কার্প মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে নবান্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নতুন আলু, ফুল কপি, বাঁধা কপি, কেশুর এবং মিষ্টি আলু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মিঠাই মিষ্টির দোকান ও ছোটদের খেলনা ও নাগরদোলা বসছে।
স্থানীয় উথলী গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি দাদার কাছ থেকে শুনেছি প্রায় ৩শ বছরের পুরোনো এ মেলা। রাত ১২টার পর থেকেই শুরু হলেও ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমে ওঠে এ মেলা। রায়হান আলী নামে আরেকজন বলেন, নবান্ন উপলক্ষে এখানে এ মেলা বসে। এদিন আমাদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত হয়। মূলত তাদের জন্যই বড় বড় মাছ কিনতে মেলায় আসছি।
মাছ বিক্রেতা নারায়ণপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহাব জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে রাত থেকে ১৫-২০ টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন। ক্রেতারা বলছেন গত বছরের তুলনায় এ বছর মাছের দাম বেশি।
শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, নবান্নের মেলা এই এলাকার একটি বিশেষ ঐতিহ্য। গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা যেন না হয় সে জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।