অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম যে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ মানিকগঞ্জের তরুণ উদ্ভাবক জুলহাস। নিজের হাতে তৈরি প্লেনে চড়ে আকাশে উড়েছেন তিনি। এ যেন বাংলাদেশের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নতুন দিগন্ত। জুলহাস মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর এলাকার জলিল মোল্লার ছেলে।
জানা গেছে, শৈশব থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল জুলহাসের। ২০১৪ সালে স্থানীয় বিকেএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পরও উদ্ভাবনী চিন্তা তাকে তাড়িয়ে বেড়াত। তবে ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো রিমোট কন্ট্রোল (আরসি) প্লেন দেখার পর তার মধ্যে জন্ম নেয় এক নতুন স্বপ্ন নিজের হাতে প্লেন বানানো।
নিজের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে জুলহাস শুরু করেন নিরলস গবেষণা। ইউটিউব ভিডিও, বইপত্র ঘেঁটে ধাপে ধাপে শিখতে থাকেন প্লেন তৈরির খুঁটিনাটি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ, নকশা তৈরি, কাঠামো সাজানো সবকিছু একাই করেছেন তিনি।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়। সম্প্রতি নিজের হাতে তৈরি সেই প্লেনে চড়ে পরীক্ষামূলকভাবে ২৫ ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম হন তিনি।
জুলহাস জানান, তার তৈরি প্লেনটিতে ব্যয় হয়েছে মাত্র দেড় লাখ টাকা। প্লেন তৈরিতে ব্যবহার করেছেন অ্যালুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, পানির পাম্প মোটর, মোটরযানের মিটার ডিভাইস এবং ট্রলির চাকা। প্রথমে অনেকে ঠাট্টা-তামাশা করলেও ধাপে ধাপে নিজের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যান তিনি।
জুলহাসের এই সাফল্যে বিস্মিত স্থানীয়রা। কেউ কেউ তো বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে, গ্রামের এক তরুণ নিজ হাতে প্লেন তৈরি করে আকাশে উড়তে পারেন।
স্থানীয়রা মনে করেন, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়, তবে ভবিষ্যতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্লেন হয়তো বাংলাদেশের আকাশেও উড়বে।
স্থানীয় তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, জুলহাস প্রমাণ করেছেন স্বপ্ন দেখার সাহস আর অধ্যবসায় থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়। তার এই উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মের জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। এখন শুধু প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, যা তাকে আরও বড় উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। হয়তো একদিন বাংলাদেশের আকাশে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি প্লেন নিয়মিত উড়বে আর সেই যাত্রার সূচনা হবে মানিকগঞ্জের তরুণ উদ্ভাবক জুলহাসের হাত ধরে।
ইতোমধ্যে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং জুলহাসের উদ্ভাবনে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।